চিকিৎসা ব্যয়ের কথা শুনে- কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গর্ভকালীন ছাব্বিশ সপ্তাহের পর ভূমিষ্ঠ এক অপরিপক্ব ছেলেশিশুর ব্যয়বহুল চিকিৎসা খরচের কথা জানতে পেরে গর্ভধারিণী মা ও বাবা ছেলেকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন।
ছেলে শিশুটিকে বাঁচাতে এখন রাখা হয়েছে হাসপাতালটির নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (ইনকিউবিউটর)। এ বয়সের শিশু বেঁচে থাকার কথা না থাকলেও নিবিড় পরিচর্যায় বেঁচে যায়।
ধীরে ধীরে সে বেড়ে উঠছে। জন্মের ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও মা-বাবা আর সন্তান নিতে ফিরে আসেননি। মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালের ইনচার্জ ডা. মেহেদী হাসান জানান, চলতি মাসের ১৮ তারিখে মাত্র ছয় মাসের এক গর্ভবতী অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আসেন।
ওই দিনই ভূমিষ্ঠ হয় একটি শিশু। যার ওজন মাত্র ৭০০ গ্রাম। সাধারণত এ বয়সের শিশুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। শিশুটিকে বাঁচাতে রাখা হয় নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে।
মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউল আলম চৌধুরী জানান, ভর্তি হওয়ার ছয় দিনের মাথায় ব্যয়বহুল চিকিৎসার কথা জানতে পেরে কৌশলে পালিয়ে যান গর্ভধারিণী মা ও তার বাবা।
বহু চেষ্টা করেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের আর খোঁজ পায়নি। ভর্তির সময়ে দম্পতির বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বলে জানিয়েছিল। এদিকে সেই থেকে শিশুটি পরিচর্যা ইউনিটে থাকায় প্রতিদিন তার পেছনে খরচ হচ্ছে ১৫ হাজার টাকারও বেশি।
শিশুটির বাবা-মাকে খুঁজে পেতে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. মজিবুর রহমান জানান, যদি অভিভাবক খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সহযোগিতা করা হবে
কাজ করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তারিকুল
সন্ধ্যার পর থেকেই শরীর খারাপ লাগছিল পোশাক কারখানার শ্রমিক তারিকুলের। স্ত্রীকে বলেছিলেন হাজিরা দিয়েই ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসবেন। রাতের শিফটে যোগ দিয়ে একটু অন্যমনস্ক হয়ে কাজ করছিলেন।
দু-একবার চারতলা ফ্লোরের মধ্যে পড়েও যান তিনি। এ অবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চেয়েছিলেন তারিকুল। কিন্তু কাজের চাপ বেশি থাকায় তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। অবশেষে কাজ করতে করতেই মারা যান তিনি।
শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা এলাকায় ডিজাইন নিটেক্স ওয়্যার লিমিটেড নামের পোশাক তৈরির কারখানায় শুক্রবার মধ্যরাতের পর এ ঘটনা ঘটে।
তারিকুল ইসলাম নেত্রকোনা জেলা সদরের ঘাগড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া গ্রামের নোমানের বাড়িতে দুই সন্তান, স্ত্রীসহ ভাড়া থেকে ওই কারখানায় দুই বছর ধরে চাকরি করে আসছিলেন।
তারিকুলের স্ত্রী সুমনা বেগম জানান, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। রাতে হঠাৎ শরীর খারাপ লাগায় কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চান। তার পরও কারখানার লোকজন তাকে ছুটি দেননি।
পরে রাত ১২টার দিকে তিনি কারখানায় কর্মরত অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর পর রাত ১টার দিকে তিনি কারখানায় কর্মরত অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার সকালে এ খবরে কারখানায় তার সহকর্মীরা ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে তারিকুলের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার দাবি জানান। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি না মেনে নেওয়ায় শ্রমিকরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
পরে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিক বিক্ষোভে মুখে দাবির কিছুটা মেনে নিতে বাধ্য হয় ডিজাইন নিটেক্স কর্তৃপক্ষ। দুই লাখ টাকা তারিকুলের স্বজনদের হাতে তুলে দেন তারা। পরে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় কারখানায় দু’দিনের শোক ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
কারখানার জিএম দেওয়ান আরিফুজ্জামান বলেন, তারিকুল কার কাছে ছুটি চেয়েছিল, সেটা এখনও বের করা যায়নি। শ্রীপুর থানার ওসি (অপারেশন) হেলাল উদ্দিন বলেন, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের সহকর্মীর এভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শোকগ্রস্ত পরিবারকে দুই লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিলে শ্রমিকরা শান্ত হন।
দুই সন্তানের জননীর এ কেমন অভিমান!
কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের জিন্নতপুর গ্রামের জামাল হোসেন এর স্ত্রী দুই সন্তানের জননী সুমি আক্তার শুক্রবার (৩১ আগস্ট) সকালে স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে ক্যারির টেবলেট খেয়ে আত্নহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সুমি আক্তার উপজেলার জিন্নতপুর গ্রামের জদু মাস্টারের মেয়ে গত প্রায় ১৫ বছর আগে প্রেম করে বিয়ে হয়। বেশ কিছুদিন যাবত তার স্বামীর পারিবারিক কলহের জের ধরে শুক্রবার সকালে অভিমান করে রসুলপুর বাজার থেকে ক্যারির টেবলেট খেয়ে বাড়ির পাশে পড়ে আছে।
এ অবস্থা সুমিকে দেখতে পেয়ে স্বজনরা চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মৃত সুমি আক্তারকে তার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ব্যাপারে থানায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।